আজকাল অফিস কিংবা রেস্তোরাঁ, এমনকি ছোট ছোট দোকানগুলিতেও প্রায়শই প্লাস্টিকের ফেস শিল্ড চোখে পড়ে। কখনও কোনও ওয়েটার ফেস শিল্ড পড়ে আপনাকে খাবারটা এগিয়ে দিচ্ছে। কখনও বা ব্যাঙ্কের কোনও কর্মী ফেস শিল্ড পরে আপনার অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত কাজে সাহায্য করছে। এই পরিস্থিতিতে আপনারা দুজনেই নিজেদের সুরক্ষিত মনে করছেন। ভাবছেন সামনের মানুষটি সংক্রমণ রুখতে যাবতীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। যদি এ রকম ভেবে থাকেন, সাবধান। আপনার সামনে ঘুরে বেড়ানো এই প্লাস্টিক ফেস শিল্ডগুলি কিন্তু ১০০ শতাংশ ভাইরাস সংক্রমণ রুখতে পারে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভাইরাসের ছোট ড্রপলেটগুলি এই প্লাস্টিকের শিল্ডের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করতে পারে কিংবা প্লাস্টিক শিল্ড থেকে বেরিয়ে সামনের মানুষটাকেও সংক্রমিত করতে পারে। সম্প্রতি এমনই তথ্য তুলে ধরেছে এক সমীক্ষা।
এ নিয়ে জাপানের রিকেন সেন্টারের গবেষকরা বিশ্বের দ্রুততম কম্পিউটার ফুগাকু দিয়ে একটি সমীক্ষা চালিয়েছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, ৫ মাইক্রোমিটারের থেকে ছোট প্রায় ১০০ শতাংশ ড্রপলেটই ওই প্লাস্টিক শিল্ডের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করতে পারে কিংবা অনায়াসে ফেস শিল্ড ভেদ করে বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে।
সম্প্রতি গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই গবেষক দলের প্রধান মাকোতো সুবোকুরা জানিয়েছেন, এই সমীক্ষার মূল্যায়ণ করে যা পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এই ধরনের ফেস গার্ডের কার্যক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। দুর্ভাগ্যবশত, একজন করোনা আক্রান্তের মুখ থেকে ছড়ানো ড্রপলেট আটকাতে এই ধরনের ফেস শিল্ডের কার্যক্ষমতা খুবই সীমিত। এই শিল্ডগুলি ৫০ মাইক্রোমিটারের থেকে বড় আকৃতির ড্রপলেট হয়তো প্রতিহত করতে পারে। কিন্তু ২০ মাইক্রোমিটারের থেকে ছোট ড্রপলেটের ক্ষেত্রে এই সমস্ত ফেস শিল্ড যথাযথভাবে কাজ করতে পারে না।গবেষকদের পরামর্শ, ফেস শিল্ড পরা যেতেই পারে। তবে শুধুমাত্র তুলনামূলক ফাঁকা জায়গায় বা এমন কোনও জায়গায়, যেখানে বায়ু চলাচলের যথাযথ ব্যবস্থা রয়েছে।
মাস্কের বদলে প্লাস্টিকের ফেস শিল্ড পরা যাবে কি না, তা নিয়ে বিশ্বের নানা দেশে নানা নিয়ম। যেমন ফেস শিল্ড পরা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও সুনির্দিষ্ট স্বাস্থ্যবিধি নেই ইংলন্ডে। তবে, স্কটল্যান্ডে মাস্কের বদলে ফেস শিল্ডের ব্যবহারে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে এখানকার সরকারের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, যদি আপনি চান তা হলে একটি ফেস শিল্ড ব্যবহার করতে পারেন, তবে সে ক্ষেত্রে আপনার নাক ও মুখ পুরোপুরি ঢাকা রাখতে হবে। এ ভাবেই নানা দেশ তার বর্তমান পরিস্থিতির নিরিখে স্বাস্থ্যবিধি জারি করেছে।
এ বিষয়ে অ্যামেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন জানাচ্ছে, এই ফেস শিল্ডগুলি করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা করতে পারে কি না, তা এখনও অজানা। পাশাপাশি, মাস্কের বদলে এই ফেস শিল্ড ব্যবহারের বিষয়েও কোনও পরামর্শ দেয়নি এই সংস্থা।তাই সাবধান থাকুন। প্রয়োজনে চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে সঠিক ফেস শিল্ড ব্যবহার করুন কিংবা মাস্ক পরুন। মনে রাখবেন, আপনার সঠিক সিদ্ধান্তই আপনাকে সুস্থ রাখবে। বাঁচাবে সংক্রমণ থেকে।