অর্ডার নেই, তাই মন্ডপ শিল্পীদের হাতে কাজও নেই। পুজোর আগে কাঁথির মন্ডপ শিল্পের কারখানায় চলছে সবজি চাষ! পুজো আসার অনেক আগেই পুজো মন্ডপ আর প্রতিমা অলঙ্করণের শিল্পকর্মের কাজ শুরু হয়ে যায় ওদের হাত ধরে। প্রতি বছরই পুজোর আগে, ঠিক এই সময়ে নাওয়া খাওয়া ভুলে, দিনরাত এক করেই মন্ডপ সজ্জার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন যাঁরা, পুর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির সেইসব মন্ডপ আর প্রতিমা অলংকরণ শিল্পীদের হাতে এবার কোন কাজ নেই!করোনার প্রভাবে কমেছে পুজোর বাজেট। তার প্রভাব পড়েছে মন্ডপ তৈরির কাজেও। ফলে কাজ কমেছে মন্ডপ শিল্পীদের। যাদের হাত ধরে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের বিগ বাজেটের পুজো মন্ডপ আর প্রতিমার কারুকাজ শুরু হয়ে যায় পুজোর পাঁচ ছয় মাস আগে থেকে, কাঁথির বিভিন্ন অঞ্চলের সেইসব মন্ডপ শিল্পীদের হাতে এবার কাজই নেই। কাজের অর্ডার নেই, তাই খুব খারাপ অবস্থায় পড়েছেন সকলে।
মন্ডপ শিল্পের কারুকাজ তৈরির ছোটো বড় কারখানায় কেউ কেউ তাই সবজি চাষও শুরু করেছেন। তাঁরা বলছেন যে, এর আগে এরকম খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি কোনদিনই হতে হয়নি। সম্মুখীন হতে হয়নি এমন সংকটের। অথচ বছরের পর বছর এইসব কাজ নিয়েই ব্যস্ততায় থাকতে হত যাদের, আজ তারাই হাঁপিয়ে উঠছেন কাজ হারিয়ে। এক কথায়, শহর এলাকার পাশাপাশি কাঁথি মহকুমার কালিনগর, নাচিনদা, মুকুন্দপুর, খেজুরি সহ বহু এলাকার শোলা, বাঁশ, বেত, কাঁথা স্টিচ সহ মন্ডপের সব ধরনের অলঙ্করণ শিল্পীরাই এখন সংকটের মুখে। সারা বছরই কাজে ব্যস্ত থাকেন। পুজোর সময় কাজ বাড়ে বহুগুণ।
সারা বছর দুর্গা পুজোর দিকেই তাকিয়ে থাকেন এই শিল্পীরা। এই সময়েই ব্যবসা হয় লক্ষ লক্ষ টাকার। মন্ডপে নতুনত্ব আনতে থিমের যা কিছু কারুকাজ সবই হয় এইসব ছোটো এবং মাঝারি মাপের কারখানাগুলিতেই। শিল্পীরা প্রতি বছর পুজোর আগে আশায় থাকেন বড় বড় অর্ডারের। সেই অর্ডার পুজোর ৬/৭ মাস আগে থেকে চলে আসতো। এবার সেই ছবিই ফিকে চেহারায়। একেবারেই ফিকে! পুজোর একমাস বাকি থাকলেও এখনও সেভাবে বড় অর্ডার আসেনি। যা অবস্থা, তাতে বড় অর্ডার যে আসবে না, সেটা বুঝেছেন সকলেই। অর্ডার নেই, নেই কাজের তোড়জোড়। শুধু কলকাতা কিংবা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত নয়, ভিন রাজ্য থেকেও মন্ডপ সজ্জার কাজের অর্ডার পেতেন কাঁথির মণ্ডপ শিল্পীরা। এ বছর সেসবেও ভাটা পড়েছে। এবার সরস্বতী পুজোর পরপরই বেশ কয়েকটি অর্ডার পড়েছিল শিল্পী নিমাই মন্ডলের কারখানায়। সেইমত কাজও শুরু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু মার্চের পর লকডাউন ঘোষণা ও পরে সময়সীমা বেড়ে যাওয়ায় বহু পুজোর কর্তারা থিমের ভাবনা-চিন্তা থেকে সরে এসেছেন।
যার জেরে প্রাক-প্রস্তুতি লক্ষ লক্ষ টাকার অর্ডার সামগ্রী প্রস্তুত করে এ ফাঁপরে পড়েছেন শিল্পীরা। সেইসব কাজপত্র আগাছালো অবস্থায় পড়ে আছে এই কুটির শিল্পের কারখানাতেই। বহু টাকার তৈরি মালা সহ অন্যান্য অলংকার সামগ্রীও পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। কোথাও আবার আমফানের কারনে কারখানার চাল উড়ে যাওয়ায় রোদ ঝড় বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে মন্ডপের বহু কারুকাজ। আশা না থাকায় অনেক শিল্পীই আবার নিজেদের কারখানা চত্বরে লাগিয়েছেন শাক সবজি। শুরু করেছেন সবজি চাষ।