বেলাগাম মন্তব্যের জন্য তাঁরই ঘনিষ্ঠ দলের নেতা অনুপম হাজরাকে সতর্ক করলেন করে দিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সম্পাদক মুকুল রায়। অনুপমের বিতর্ক প্রসঙ্গে তিনি বললেন, দায়িত্বপূর্ণ লোকেদের সতর্ক হয়ে কথা বলা উচিত।
শনিবার বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক নিযুক্ত হয়েছেন অনুপম হাজরা। রবিবার বারুইপুরে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে বেশিরভাগ কর্মী-সমর্থকের মুখেই মাস্ক ছিল না। এমনকী অনুপমও মাস্ক পরেননি। কোভিডবিধি লঙ্ঘন প্রসঙ্গেই প্রশ্ন করা হয় তাঁকে।
সেই প্রশ্নের জবাবেই অনুপম বলেছিলেন, “করোনা হলে প্রথমেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জড়িয়ে ধরব।” তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে ওঠে বিতর্কের ঝড়। তৃণমূলের উদ্বাস্তু সেলের সদস্যরা এই মন্তব্যের বিরোধিতায় সোমবার সকালে শিলিগুড়ি কমিশনারেটের সামনে জড়ো হন।
অনুপমের বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করেন তাঁরা। এ প্রসঙ্গে মুকুল রায়ের প্রতিক্রিয়া, “যাঁরা দায়িত্বপূর্ণ লোক, তাঁদের কোনও কথা বলার আগে নিশ্চয়ই সতর্ক থাকা উচিত।” বলে রাখি, মুকুল রায়ের হাত ধরেই তৃণমূল থেকে বিজেপিতে এসেছেন অনুপম। তিনি মুকুলের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই দলে পরিচিত।
এদিকে, করোনা হলে মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি কেন জড়িয়ে ধরবেন, রবিবার সে ব্যাখ্যাও অনুপম দিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বা এই অতিমারিতে যাঁদের কাছের মানুষরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের কষ্টটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝতে পারবেন।’’
বিজেপি নেতার ওই মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় রাজনৈতিক শিবিরে। বিজেপি নেতাদের একাংশও অনুপমের ওই মন্তব্যের সঙ্গে নিজেদের দূরত্ব স্পষ্ট করে দেন। সোমবার অনুপম অবশ্য আত্মপক্ষ সমর্থনে মুখ খুলেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
অনুপমের কথায়, ‘‘আমার মন্তব্য যদি অবমাননাকর হয়ে থাকে আর তার উপরে ভিত্তি করে যদি এফআইআর হয়ে থাকে, তা হলে সেই সব অবমাননাকর দিনগুলো ভুলবেন না, যখন দেশের প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে আপনি বলেছিলেন— কোমরে দড়ি বেঁধে ঘোরাব।’’
তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশি পদক্ষেপ হলে মুখ্যমন্ত্রী-সহ তৃণমূলের অন্য অনেক নেতা-মন্ত্রীর বিরুদ্ধেও পুলিশি পদক্ষেপ হতে হবে বলে এই বিজেপি নেতা তথা তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদের দাবি। উল্লেখ্য, এই ইস্যুতে অনুপমের সমালোচনা করেছেন লোকসভায় কংগ্রেস দলনেতা অধীর চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আমার হাজারও অভিযোগ আছে ও থাকবে। অভিযোগ ব্যক্ত করার অধিকার আমার আছে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য করার কোনো অধিকার নেই।”
তিনি আরও বলেন, “একজন মহিলার প্রতি বিজেপি নেতার অশালীন মন্তব্য বাংলার তথা ভারতীয় সংস্কৃতির অপমান বলে মনে করি। প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ একদিন দিদিকে দেবী বলতেন। তাঁর দয়াতে সাংসদ হয়েছিলেন। বিজেপি পার্টি ক্ষমা চাও। বাংলায় এসব চলবে না।”