ঘুম ভুলেছি, জেগে থাকি সারা বেলা… শচীন দেববর্মণের গলায় এই গান শুনতে বেশ লাগে। কিন্তু বাস্তবে এমন সমস্যা যাঁদের হয়, তাঁরাই জানেন অনিদ্রা কী মারাত্মক যন্ত্রণার! মানবদেহের কার্যকারিতা ঠিক রাখার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম খুবই দরকার। একটা গোটা দিন কর্মক্ষম থাকতে হলে আগের রাতে পর্যাপ্ত গভীর ঘুম খুবই দরকার। আর শুধু শারীরিক সুস্থতার জন্য নয়, মস্তিষ্ক সচল রাখতেও ঘুমের গুরুত্ব খুব-ই।
তাই ঘুমোনোর অন্তত এক ঘন্টা আগে টিভি বন্ধ করে দিন আর স্মার্টফোনটা সরিয়ে ফেলুন হাতের নাগালের বাইরে। এই ধরনের গ্যাজেট মানসিক চাপ তৈরি করে এবং ঘুমের সমস্যা বাড়ায়, সঙ্গে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমায়। বদলে যতক্ষণ না ঘুম আসছে, যে কোনও ধরনের বই পড়তে পারেন। আসলে একটানা অনেক্ষণ বই পড়লে চোখ ক্লান্ত হয়ে যায়, ফলে ঘুম এসে যায় সহজেই।
ঘুমের সঙ্গে মস্তিস্কের সম্পর্ক ঠিক কী? ঘুম নিয়ে সারা বিশ্ব জুড়ে চলছে গবেষণা। গবেষকদের অধিকাংশই বলেন, ঘুমের একটি প্রধান কাজ হচ্ছে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা পুনরুদ্ধার ও স্মৃতি মেরামত করা। কর্টেক্স নামের মস্তিষ্কের চিন্তা ধরে রাখা, ভাষা মনে রাখার জন্য কার্যকর অংশটি ঘুমের সময় মানুষের বোধ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পুনরুদ্ধার অবস্থায় চলে যায়।অর্থাত্, যদি ঘুম না হয়, তা হলে মস্তিষ্কের এই অংশটি ক্লান্ত হয়ে পড়বে, হারাতে থাকবে কর্মক্ষমতা। এ জন্যই ঘুম-বঞ্চিত মানুষের মস্তিষ্ক ঠিক ভাবে কাজ করে না। গবেষকেরা বলেন, যাঁরা মগজ খাটিয়ে বেশি কাজ করেন, তাঁদের অন্যদের তুলনায় বেশি ঘুম দরকার।
গবেষকেরা এও বলেন, যাঁরা কম ঘুমান তাঁদের ক্ষেত্রে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। যেমন মানসিক অবসাদ, বিষণ্ণতা, ভুলে যাওয়া, দ্রুত রেগে যাওয়া। অর্থাৎ, মনমেজাজ ভাল রাখতেও ঘুমের বিকল্প নেই।সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা বলছে, Covid-19 অতিমারীর জেরে তৈরি হওয়া আতঙ্কে ঘুম উড়েছে বিশ্ববাসীর। রাতের পর রাত ঘুমোতে পারছেন না বিশ্বের কয়েক কোটি মানুষ। উদ্বেগ, আতঙ্কের পাশাপাশি লকডাউন-সহ সামাজিক বিচ্ছিন্নতার জন্য তৈরি হচ্ছে নিঃসঙ্গতার বোধ। নিরবচ্ছিন্ন ভাবে ঘুমোতে পারছেন না অনেকেই। অনেকের মাঝপথে ভেঙে যাচ্ছে ঘুম, পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাবে তিরিক্ষি হয়ে থাকছে মেজাজ, বিগড়োচ্ছে শরীর। এর প্রভাব পড়ছে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে। অথচ এই যে অতিমারী পরিস্থিতিতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর দাওয়াই দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা, সে ক্ষেত্রে কিন্তু পর্যাপ্ত ঘুম একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।