বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে এক বছর হয়ে গেছে, এক বছর পরে বাণিজ্যিক সম্প্রচারে যাচ্ছে এই স্যাটেলাইটটি। স্যাটেলাইটটির সাথে সংযুক্ত হচ্ছে দেশের আরও সরকারি এবং বেসরকারি ৩১ টি টেলিভিশন।
স্যাটেলাইটটি নির্মিত হয় থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস প্রতিষ্ঠানে। ২০১৮ সালের ১১ মে বাংলাদেশ সময় রাত ২টা ১৪ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটি উৎক্ষেপণ করা হয়। স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের ছয় মাস পর এই প্রতিষ্ঠানটি থেকে স্যাটেলাইটটির দায়িত্ব বুঝে নেয় বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল) কোম্পানিটি।
বিসিএসসিএল কর্তৃপক্ষ জানান, স্যাটেলাইটটির এক বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা এবং নিরাপদ ব্যাংকিং সুবিধা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে তারা। ১৯ মে থেকে ইন্টারনেট বান্ডউইথের মাধ্যমে সেবা চালু করা হবে এবং একই দিনে ‘ডাইরেক্ট টু হোম’ (ডিটিএইচ) সেবাও চালু করা হবে। এর মাধ্যমে কেবল ছাড়াই অ্যানটেনার মাধ্যমে টেলিভিশন দেখা যাবে। সরকারের পরিকল্পনায় আছে, হাতিয়া দ্বীপের ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিবেন। সেখানে টেলি-মেডিসিন ও টেলি-এডুকেশন সেবার পরিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
স্যাটেলাইটটি নির্মান করতে বাংলাদেশের খরচ করতে হয়েছে ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। তবে এখনো স্যাটেলাইটটি সরকারের আয়ের খাতায় নাম লেখাতে পারেনি।
বিসিএসসিএলের চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘পরীক্ষামূল্ক সম্প্রচারে কোনো টাকা পায়নি স্যাটেলাইটটি। বাণিজ্যিক সম্প্রচারেও অর্থ উপার্জন ছাড়া প্রথম তিন মাস বিনা মূল্যে সেবা দিতে হবে। এ সময় কোনো ভুল থেকে থাকলে তা সংশোধন করা হবে। তিনি বলেন, স্যাটেলাইটের সঙ্গে ৩১টি বেসরকারি টেলিভিশনের পাশাপাশি, একটি বেসরকারি ব্যাংকের এটিএম বুথ সেবা যুক্ত হচ্ছে। তিনি আশা করছেন বাণিজ্যিক সম্প্রচার শুরু হওয়ার তিন মাস পর প্রতিটি টিভি চ্যানেল থেকে মাসিক প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার মত আয় করা যাবে।
গত ২৯ জানুয়ারি কারিগরি দিকগুলো সমন্বয় করার জন্য বিসিএসসিএল, অ্যাসোসিয়েশন অব টিভি চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো), বাংলাদেশ ব্রডকাস্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিটি কয়েকটি সভা করার মাধ্যমে টেলাইট, টেলিভিশন চ্যানেল এবং গ্রাউন্ড স্টেশনের যোগাযোগের সমাধানে কি কি করনীয় সেই সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়।
অ্যাটকোর সহসভাপতি ও একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক বাবু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আমাদের জাতীয় স্যাটেলাইট। টেলাইট হস্তান্তরের প্রক্রিয়া, চ্যানেলগুলোর সঙ্গে প্রযুক্তিগত সংগতি মেলাতে সময় লেগেছে। এই স্যাটেলাইটি আধুনিক ইনস্যাট সি-ব্যান্ড প্রযুক্তির। দেশের যেসব টিভি চ্যানেলগুলো রয়েছে সেগুলো চলছে ৮ থেকে ১০ বছরের পুরোনো সি-ব্যান্ড প্রযুক্তিতে। এসব চ্যানেল্গুলোর পক্ষে তো ইনস্যাট সি-ব্যান্ডের যন্ত্রপাতি কিনে আপগ্রেড করা সম্ভব নয়।
গত বছরের নভেম্বরে দেশের নয়টি টেলিভিশন চ্যানেল ও একটি ক্যাবল অপারেটর পরীক্ষামূলকভাবে এই স্যাটেলাইট ব্যবহার করে। পরীক্ষামূলক সম্প্রচার করা তিনটি টিভি চ্যানেল জানায় এই স্যাটেলাইট দিয়ে তারা শক্তিশালী ও ভালো মানের সিগন্যাল পেয়েছে।
সম্প্রচারে যুক্ত ছিল ডিবিসি চ্যানেল। বর্তমানে এই টিভি চ্যানেলটি বাহিরের একটি স্যাটেলাইত ব্যাবহার করছে সম্প্রচারের জন্য। এতে তাদের বছরে প্রায় ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। চ্যানেলটির সম্প্রচার প্রকৌশল বিভাগের প্রধান ও বাংলাদেশ ব্রডকাস্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট দিয়ে সম্প্রচারের পর সিগন্যালের শক্তি ও মান নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। স্যাটেলাইটটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা গেলে প্রচুর টাকা দেশেই থাকবে। তবে ক্যাবল অপারেটরের ক্ষেত্রে স্যাটেলাইট প্রতিষ্ঠানকে জোর দিতে হবে।