আপনি যদি ব্যাকপ্যাকার হন, তাহলে অফসিজনে সেইন্ট মার্টিন্স আইল্যান্ড হতে পারে ক্যাম্পিং এর জন্য একটি আদর্শ স্থান। যারা ক্রাউড পছন্দ করেন না একবার হলেও অফ সিজনে ছেড়া দ্বীপে ক্যাম্পিং করে আসতে পারেন।
যেভাবে যাবেনঃ ঢাকা থেকে টেকনাফ অথবা কক্সবাজার, আমি সাজেস্ট করবো কক্সবাজার নেমে সিএনজি দিয়ে মেরিন ড্রাইভ হয়ে টেকনাফ আসতে, জনপ্রতি ২৫০ টাকা লাগবে। এতে সময় ও কম লাগবে মেরিন ড্রাইভ ও দেখা হয়ে
যাবে।
অফ সিজনে টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন যাবার একমাত্র ওয়ে হচ্ছে লোকাল ট্রলার। প্রতিদিন একই স
ময়ে দুইটা ট্রলার ছাড়ে একই ভাবে সেইন্ট মারটন্স থেকে দুইটা ছেড়ে আসে। ওয়েদার খারাপ থাকলে ট্রলার বন্ধ থাকে।
বলে রাখা ভালো এই ট্রলার ভ্রমনে যেই অনন্দ পাবেন সারা জীবন মনে রাখার মত আর সেটা শীপে পাওয়া
সম্ভব না, তবে অবশই লাইফ জ্যাকেট সাথে রাখবেন, ট্রলারে যেগুলো দেয় ওইগুলো ভালো কোয়ালিট ভালো না। ভালো সানস্ক্রী
ন, সানগ্লাস আর একটা ছাতা অবশ্যই অবশ্যই সাথে রাখবেন না হলে রোদে পুড়ে কয়লা হয়ে যাবেন। ভরপেট খেয়ে কখনই ট্রলারে উঠবেন না যাদের সী সিকনেস আছে।
ট্রলার ছাড়ার সময় জোয়ার ভাটার উপর নির্ভর করে তাই সবচেয়ে ভালো স্থানীয় কারো সাথে কথা বলে আসা।
পশ্চিম বীচের কিছু রিসোর্ট সারা বছরই খোলা থাকে অফ সিজনে দুই বেড এর রুম ৫০০-৮০০ টাকার মাঝে পেয়ে যাবেন, কিং সাইজ ডাব খেতে পারবেন ২০ টাকার মাঝে যেটা সিজনে পারবেন না। আমরা বিচের সাথে ব্লু লেগুন
রিসোর্টে থেকেছিলাম, জোয়ারের সময় পানি রুমের কাছে এসে পরে। দুইটা হ্যামক দেয়া ছিলো রুমের পাশে।
বার বি কিউ করতে চাইলে বেস্ট অপশন, বাজার থেকে তাজা মাছ কিনে আনা। ফিশারী ঘাটে বিকালের পর প্রচুর তাজা সামুদ্রিক মাছ পাবেন। মাছ কিনে দিলে রিসোর্টেই বার বি কিউ এর সব সুবিধা পাবেন। একটা সার্ভিজ চার্জ দিয়ে হয় ওদের । আমরা দুইটা টুনা, আর কোরাল দিয়ে করেছিলাম। বার বি কিউ জন্য টুনা আর কোরাল বেস্ট, রুপচাদা ফ্রাই করতে পারেন।
ভালো পাওয়ার ব্যাংক সাথে নিবেন, বিদ্যুৎ সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পাবেন, মোটামুটি সব মোবাইলের নেটওয়ার্ক ই পাওয়া যায়।
সেন্ট মার্টিনে কমপক্ষে দুই রাত না থাকলে আসল মজা পাওয়া যায় না, দ্বিতীয় দিন ছেড়া দ্বীপ গিয়ে
ছিলাম ক্যাম্পিং এর উদ্যেশ্যে।
ছেড়া দ্বীপে যদি ক্যাম্পিং করতে চান তাহলে রান্নার ব্যাবস্থা নিজেদের করাই ভালো, আমরা স্থানীয়দের দিয়ে রান্না করিয়ে বিশাল ধরা খেয়েছিলাম, জনপ্রতি বিশাল এমাউন্টের বিল ধরিয়ে দিয়েছিলো। আমরা ক্যাম্পিং করেছিলাম ছেড়া দ্বীপের একদম শেষ প্রান্তে যেখানে স্থলভাগ শেষ। যখন জোয়ার হয় তখন এই অংশটি মুল ভুখন্ড থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্য থাকে। তখন চাইলেও মুল দ্বীপে আসতে পারবেন না, ভাটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
“প্রকৃতির সান্যিধ্যে” কথাটির তাৎপর্য ওইদিন রাতে বুঝতে পেরেছিলাম, রাতের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি এত সুন্দর ভাবে দেখা যায় আগে ধারনা ছিলোনা, সারাটা রাত সমুদ্রের গর্জন শুনতে শুনতে পার করে দিয়েছি। সকাল বেলা তাবুর
জানালা দিয়ে বৃস্টি দেখার মজাই ছিলো আলাদা।
ওই রাতে আমরা একটা গ্রপ ক্যাম্পিং করেছিলাম। বিচ পুরো ফাকা কোন হইচই বা কোলাহল ছিল না। আর খুব কম খরচে ট্যুর দেয়া সম্ভব। আমাদের ৬ জনের জনপ্রতি ৪২০০টাকা খরচ হয়েছিলো দুইরাত সেইন্ট মার্টিন ছিলাম আর একবেলা কক্সবাজার, হাই ফাই খাওয়া দাওয়া, থাকা আর বারবিকিউ সহ। আর অবশ্যই স্টুডেন্ট আইডি/ এনআইডি সাথে রাখবেন, বর্তমানে অনেক চেকিং হয়।
দয়া করে সমুদ্রে প্লাস্টিক ফেলবেন না। আমরা সাথের সমস্ত প্লাস্টিক সাথে করে নিয়ে এসেছিলাম, একটা বড় পলিতে করে সমস্ত অপচনশীল দ্রব্য সাথে নিয়ে আসুন, প্রপার ডিসপোজালের কোন ওয়ে না থাকলে অন্তত একত্র করে সব পুড়িয়ে দিন।
রিভিউঃ শুভ্র আকাশ