পাবনায় সন্তানদের ঈদ চাহিদা মেটাতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন এক কৃষক বাবা। জানা যায়, তার শরীরে অনেক আগে বাসা বেঁধেছিল কিডনি জনিত সমস্যা। পিছু ছিল ভাতের অভাব। যেখানে ভাতের অভাব, সেখানে ঈদ মানে তো ফ্যাশন। লুকিয়ে কান্না করা। শূন্যে চেয়ে থাকা।
এভাবে গত কয়েক মাস আগে সুইসাইড করেছিল ঢাকা ইউনিভার্সিটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের ফোর্থ ইয়ারের স্টুডেন্ট জাকির হোসেন। জাকিরের আত্মহত্যার অন্যতম কারণ ছিল অভাব। অভাবের তাড়নায় সে আত্মহত্যা করেছে।
বঙ্গদেশে ‘অভাব’ ওয়ার্ডটি অতি প্রাচীন। টাকার অভাব, ভাতের অভাব দুটোই যেন একি সুঁতোয় গাঁথা। যার পিছু নেয় তাকে ছাড়েইনা।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় যেদিন মারা গিয়েছিল, সেদিন তার লাশের কফিনে পড়েছিল শত ফুলের তোড়া। নীথর দেহে পড়েছিল ফুলের পাপড়ি ও গলার মালা। শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে প্রণাম করেছিল হাজারো মানুষ। অথচ এই মানুষটিই পুরোটা জীবন লড়েছেন অভাবের সাথে। মৃত্যুর আগেরদিন ঘরভাড়া দিতে না পারায় যেতে হয়েছিল জেলে। তাই তিনি বলেছিলেন, দু মুটো অন্নের ব্যবস্থা না করে সাহিত্য জগতে এসো না।
অভাবের প্রসঙ্গ আসলে আমার আরো দুটো অভাগা লেখকের কথা মনে পড়ে যায়। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তার ‘পথের পাচাঁলী’ উপন্যাস ছাপিয়ে ছিলেন ঋণের টাকায়। শহীদুল্লাহ কায়সার তার অমর কালজয়ী উপন্যাস ‘সংসপ্তক’ নিয়ে ধারে ধারে ঘুরেছিলেন দীর্ঘ সাতবছর।
সবচেয়ে বড় অভাগা লেখক হলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তার চার বছরের শিশু বুলবুল যে রাতে মারা গিয়েছিল, সে রাতে তার পকেটে একটা কানাকড়িও ছিলনা। অথচ তার কাফন, দাফন, গাড়িতে করে লাশ নেয়া ও গোরস্তানে জমি কেনার জন্য দরকার দেড়শো টাকা। সে সময়ে দেড়শো মানে অনেক টাকা। এত টাকা কই পাই?
বিভিন্ন লাইব্রেরিতে লোক পাঠানো হল। না, টাকার তেমন ব্যবস্থা হয়নি। শুধুমাত্র ডি.এম লাইব্রেরি দিল ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ টাকা। আরো অনেক টাকা বাকি। টাকা আবশ্যক।
ঘরে লাশ রেখে কবি গেলেন এক প্রকাশকের কাছে। প্রকাশক শর্ত দিল। এই মুহুর্তে কবিতা লিখে দিতে হবে। তারপর টাকা। কবি মনের নীরব কান্না, যাতনা লিখে দিলেন কবিতায় কবিতায়-
“ঘুমিয়ে গেছে শ্রান্ত হয়ে
আমার গানের বুলবুলি।
করুণ চোখে বেয়ে আছে
সাঁঝের ঝরা ফুলগুলি!”
টাকার অভাব বড় অভাবরে বাপ!
আরো খবর পড়ুনঃ ধান চাষীদের পাশে অধিনায়ক মাসরাফি