
ডাক্তারি ভাষায় রোগের নাম কোলেলিথিয়াসিস।কি হল চিনতে পারলেন না তো ? সহজভাষায় বলতে গেলে এটি আমাদের খুবই পরিচিত একটি রোগ ,যার নাম পিত্তথলি বা গলব্লাডারে পাথর । কোন লক্ষণ ছাড়াই এই রোগ শরীরে বাসা বাঁধে, এবং এটি থেকে পরবর্তী কালে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে ।

এটি একটি থলের মত অংশ যা লিভারের নিচের দিকে অংশে থাকে ,লিভার বা যকৃতে যে পিত্তরস উৎপাদিত হয় তা ধারন করা এবং এর ঘনত্ব বৃদ্ধি করাই পিত্তথলির কাজ। পিত্তরস চর্বি জাতীয় খাবার পরিপাকে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।নানাবিধ কারণে এই পিত্তথলিতে পাথর সৃষ্টি হতে পারে ,এই পাথরের আকৃতি ছোট থেকে মটরের দানার মতো,এমনকি তার বড় পর্যন্ত হতে পারে । সাধারণ ভাবে আর অস্তিত্ব বোঝা না গেলেও আল্ট্রাসনোগ্রাম করলে এই রোগের লক্ষণ চিহ্নিত করা যায় ।
সাধারণত পুরুষদের চেয়ে নারীদের এই রোগের প্রবণতা বেশি, কারণ তাদের দীর্ঘ সময় না খাওয়ার প্রবণতা বেশি ।এছাড়াও অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ,স্হূলতা বা অত্যঅধিক শারীরিক ওজন, চল্লিশোর্ধ বয়স, হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া ব্যক্তি,জন্মনিরোধক পিল গ্রহণ এবংগর্ভাবস্থা এগুলিকেও পিত্তথলি তে পাথর হয় কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে । কিছু কিছু লক্ষণ দেখে এর অস্ত্বিত্ব টের পাওয়া যায় । যেমন :-

১. ওপরের পেটের ডান দিকে তীব্র ব্যথা ডান কাঁধে ছড়ায় এবং রোগীর বমি হয়।
২. অনেক সময় কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে। এ লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

৩. তৈলাক্ত খাবার, চর্বি জাতীয় খাবার বা মাংস খেলে এ রকম ব্যথা হতে পারে। তবে গ্যাসের ওষুধ খেলে এটি ভালো হয়ে যায়।
৪. মধ্য পেটে ব্যথা হয়। মধ্য পেটে ব্যথা হয়ে একেবারে পেছন দিকে চলে যায়।
৫. জ্বরের সঙ্গে বমি হতে পারে। রোগী এ ক্ষেত্রে টক্সিক হয়ে যেতে পারে।
৬. জ্বরের সঙ্গে জন্ডিস হতে পারে। এ ক্ষেত্রে যা হয় তা হলো পাথর হয়তো পিত্তনালিতে চলে গেছে। সে জন্য জ্বর হয়ে কোলেনজাইটিস নিয়ে আসতে পারে। এসব লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যাবেন।

পিত্তপাথর দীর্ঘদিন থাকার ফলে কোনো ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে ,এমনকি দীর্ঘদিন এই রোগ থাকলে তা ক্যান্সার এর দিকেও মোর নিতে পারে।তাই জীবন যাপনের ক্ষেত্রে কিছু নিয়মানুবর্তিতা আনা উচিত যাতে এই ধরণের সমস্যা সৃষ্টি না হয় ।যেমন :-প্রতিদিন কমপক্ষে ২ লিটার জল পান করতে হবে,চর্বিযুক্ত খাবার কম খেতে হবে,শরীরের অতিরিক্ত ওজন হঠাৎ না কমিয়ে ধীরে ধীরে কমাতে হবে,রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে,. ধূমপান এবং মাদক গ্রহণ পরিত্যাগ করতে হবে,প্রচুর পরিমাণ আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে,টিনজাত ও প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার পরিহার করা উত্তম, দীর্ঘদিন যাবত জন্মবিরতিকরণ পিল গ্রহণ না করা বা এ বিষয়ে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলা।