
হৃৎপিণ্ড আমাদের দেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। এর মূল কাজ হলো দেহের প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রক্ত সরবরাহ করা।আর এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে যে শক্তি লাগে সেটি আসে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের প্রবাহের মাধ্যমে। করোনারি ধমনীর মাধ্যমে হৃৎপিণ্ড নিজের জন্য এই রক্ত সরবরাহ করে। কোনো কারণে রক্ত সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেলেই বিপদ।
:max_bytes(150000):strip_icc()/heart-anatomy-581b6f483df78cc2e85bd625.jpg)
ধমনীতে রক্ত জমাট বেঁধে ব্লক তৈরি হয়। তখন হৃৎপিণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ কিছু পেশীতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে সেগুলো অকেজো হয়ে যেতে পারে। আর একেই আমরা বলি হার্ট অ্যাটাক, এটির আভিধানিক নাম মায়োকার্ডিয়াল ইনফারকশন।হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পূর্বে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। রোগীসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের এই লক্ষণগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত।যেমন- বুকে ব্যাথা ,মাথা ঘোরা,বমি বমি ভাব ,শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা ,দেহের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা ইত্যাদি |এই লক্ষণ গুলি দেখলেই রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন,এবং তার আগে কিছু জরুরি পদক্ষেপ নিন |যেমন –

১. প্রথমেই ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে :- বুকে ব্যথা অনুভূত হলে সাথে সাথেই রোগীকে অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়াতে হবে। অনেক রোগীর অ্যাসপিরিনে এলার্জি থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে ডাক্তার রোগীকে অন্য যে ব্যথানাশক ওষুধ লিখে দিয়েছেন তা খাওয়াতে হবে। ব্যথানাশক ওষুধ চিবিয়ে সেবন করার উপযুক্ত কিনা তা ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নেওয়া ভালো। কারণ গলাধঃকরণ করা ওষুধের তুলনায় চিবিয়ে সেবন করা ওষুধ দ্রুত শরীরের উপর ক্রিয়া করে। চিবিয়ে সেবন করার মতো শক্তি না থাকলে ওষুধ গুঁড়ো করে সেবন করতে সাহায্য করতে হবে।
২ . রোগীর শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে কিনা খেয়াল করতে হবে :-রোগীর নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা হলে শরীরে পর্যাপ্ত বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য শরীরের অতিরিক্ত কাপড় ঢিলেঢালা করে দিতে হবে। অনেক সময় রোগীর জিহ্বা গলায় আটকে যেতে পারে। এরকম হলে দ্রুত তা ছাড়িয়ে দিতে হবে। বমি আসলে যাতে তা শ্বাসনালীতে চলে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার।

৩ . যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে:-দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে হবে। কয়েকটি হাসপাতালের জরুরী বিভাগের অ্যাম্বুলেন্স নাম্বার তাই অবশ্যই কাছে রাখা উচিত |

৪ . হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেলে সিপিআর পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে;- হার্ট অ্যাটাক হলে রোগীর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা জ্ঞান হারিয়ে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে দুই হাত দিয়ে রোগীকে সিপিআর (কার্ডিয়াক পালমোনারি রিসাসসিটেশন) দিতে হবে। ইন্টারনেটে সিপিআর কিভাবে দিতে হয় তা নিয়ে অসংখ্য ভিডিও ও আর্টিকেল রয়েছে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি অভিজ্ঞ কোনো ডাক্তারের কাছ থেকে হাতে কলমে পদ্ধতিটি শিখে নেওয়া হয়। এতে বিপদের সময় আপনার অভিজ্ঞতা আরেকজনের জীবন বাঁচানোর কারণও হতে পারে।
মনে রাখতে হবে যে, সিপিআর পদ্ধতি কেবল হৃৎপিণ্ড কাজ করা বন্ধ করলেই প্রয়োগ করতে হবে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে হৃৎপিণ্ড কাজ না করলেও সাময়িকভাবে দেহে রক্ত চলাচল অব্যাহত থাকে।
৫ .জিহবার নিচে নাইট্রোগ্লিসারিন স্প্রে দিতে হবে।
৬ .রোগিকে আশ্বস্ত রাখা|

প্রথমবারের মতো হার্ট অ্যাটাক হলে রোগী হাসপাতালে সাধারণ চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে যেতে পারেন। কিন্তু এতেই বিপদ পুরোপুরি কেটে যাবে না। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী হার্টে কোনো ব্লক আছে কিনা তার চিকিৎসা করাতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো প্রকার অবহেলা করা যাবে না। তাই আজ থেকেই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস তৈরি করতে হবে। অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। নিজেকে সবসময় প্রফুল্ল রাখতে হবে। কোনো প্রকার অযথা দুশ্চিন্তা করা শরীরের জন্য ভালো নয়। আর অবশ্যই ডাক্তারের কাছে রুটিন চেকাপের জন্য যেতে হবে।