খোলাপোতা তিন মাথার মোড় খুবই জমজমাট এলাকা । দোকানপাট, পথচলতি মানুষের ভিড়ে লক্ষ করা গেল একজন মহিলা মাস ছ’য়েকের শিশু কোলে ইতস্তত ঘুরছেন। কিছুক্ষণ পরেই একটি বাইক এসে সেখানে দাঁড়ালো, এবং একটি যুবক বাইক থেকে নেমে মহিলাটির সাথে কথা বলতে শুরু করলেন। দু’-চার কথা বলার পরই কোমর থেকে ভোজালি বের করে যুবকের গলায় সজোরে কোপ বসিয়ে দিলেন মহিলা। আশপাশের লোকজন কিছু বুঝে ওঠার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন ওই যুবক।
মঙ্গলবার সকালে বসিরহাট পুলিশ জেলার খোলাপোতা মোড়ে রোমহর্ষক খুনের ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়াল । পরে অবশ্য এলাকাবাসী মারুভা বিবি (৩৫) নামে ওই মহিলা, তাঁর স্বামী এবং আরও এক যুবককে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন। পুলিশ এসে তিন জনকে গ্রেফতার করেন এবং পাশাপাশি নিহত আসিফ গাজির (৩৫) মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠান।প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, যুবকটির বাড়ি বাংলাদেশে । তবে ওই এলাকায় নিহত যুবকটি মাছের ভেড়িতে কাজ করত।

কিন্তু কেন সরাসরি যুবককে খুনই করে বসলেন মারুভা? স্বামী বাইরে থাকার সুযোগ নিয়ে ওই যুবক মহিলাকে উত্ত্যক্ত করত মাটিয়া থানা এলাকার বাসিন্দা মারুভার পরিবারের লোকজনের অভিযোগ,। ওই যুবকের বিরুদ্ধে কুপ্রস্তাব দেওয়া থেকে, ফোনে হুমকি, সংসার ছেড়ে তাঁর সঙ্গে পালানোর জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে | এমনকী, শারীরিক সম্পর্কের জন্য জোরাজুরিও চলত বলে দাবি পরিবারের। পুলিশের অনুমান, সেই প্রতিহিংসা থেকেই মহিলা এরকম প্রকাশ্য রাস্তায় খুনের পথ বেছে নেন। যদিও আসিফের সঙ্গে বিয়ের আগে সম্পর্ক না বিবাহ বহির্ভুতো সম্পর্ক মারুভার গড়ে উঠে ছিল সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারী অফিসাররা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মারুভা বিবির বাড়ি মাটিয়া থানার ঝুরুলি গ্রামে। স্বামী কলকাতায় রান্নার কাজ করেন। তাদের দুই সন্তান রয়েছে। এ দিন মহিলার শাশুড়ি বলেন, ‘‘ছেলে-বউমা আমাদের সঙ্গে থাকে না। ওরা কাছেই আলাদা বাড়ি ভাড়া করে থাকে। ছেলে বাইরে থাকে বলে আসিফ বউমার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে। নানা ভাবে বিরক্ত করত। আমার ছেলেকে ছেড়ে ওঁকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিত।’’
কিন্তু মঙ্গলবার ঠিক কী ঘটেছিল? প্রত্যক্ষদর্শী এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মারুভা এ দিন একাই বাড়ি থেকে বার হন। কিছুক্ষণ পর তাঁর স্বামী ও এক বন্ধু বাইকে করে তাঁকে নিয়ে খোলাপোতা মোড়ে আসেন। ফোন করে আসিফকে খোলাপোতা মোড়ে ডেকে নেন। মারুভার স্বামী ও তাঁর বন্ধু কিছু দূরে বাইকে বসে ছিলেন। বাইক থেকে নেমে সন্তানকে কোলে নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে থাকেন। আসিফ আসতেই তাঁর কাছে গিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। তার পর কয়েকটা চড়-থাপ্পড়ের পরেই কোমরে গুঁজে রাখা ভোজালি বার করে কোপ বসিয়ে দেন। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন আসিফ।
মাঝ রাস্তায় এমন রক্তারক্তি কাণ্ড দেখে ছুটে আসেন আশাপাশের দোকানদার এবং পথচলতি মানুষজন। তাঁরা ওই আসিফকে হাসপাতালে পাঠানোর বন্দোবস্ত করতে করতেই মারা যান আসিফ। তখনই নজর পড়ে মহিলার দিকে। তাঁকে ধরে ফেলেন তাঁরা। খানিকটা দূরে থাকা তাঁর স্বামী এবং বন্ধুকেও ধরে শুরু হয় মারধর। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তিন জনকেই নিজেদের হেফাজতে নেয়। পরে তাঁদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
স্থানীয় অন্য একটি সূত্রে খবর, আসিফকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকত। সোমবার রাতেও দু’জনের মধ্যে এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা চলে বলে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে। সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
