এখন এলপিজি সিলিন্ডার প্রায় সব বাড়িতেই রয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার রান্নাবান্না আরও সহজ করে তুলতে সাহায্য করেছে। তবে এই সিলিন্ডার ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। একটুখানি অসাবধান হলেই এই সিলিন্ডার থেকে ঘটে যেতে পারে ভয়ানক বিপদ। তাই এই গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। তার জন্য জেনে নিতে হবে কিছু প্রক্রিয়া এবং সেগুলো মেনে চললেই বড় দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে।
জেনে নিন সেই প্রক্রিয়া গুলোঃ
১।সংরক্ষনের প্রক্রিয়াঃ

এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার করার সময় সব সময় যেটি প্রথমে মাথায় রাখতে হবে তা হলো এটির সংরক্ষণের স্থান। এলপিজি সিলিন্ডারের সংরক্ষণের একটি নির্দিষ্ট স্থান করতে হবে যেটি সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ হবে। আপনার অতিরিক্ত এলপিজি সিলিন্ডার টি কিংবা শেষ হয়ে গেছে এমন সিলিন্ডারটি এমন স্থানে রাখতে হবে যেখানে সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে না। যেখানে আপনি আপনার এলপিজি সিলিন্ডার টি রাখছেন তার আশেপাশে যেন কোথাও তাপের উৎস না থাকে। এছাড়া কোন দাহ্য পদার্থের সামনে কিংবা বৈদ্যুতিক সকেট এর সামনে সিলিন্ডার কখনোই রাখবেন না। বদ্ধ জায়গায় সিলিন্ডার কখনোই ভুলেও রাখবেন না। এই সাবধানতা গুলো অবলম্বন না করে চললে বিশাল বিপদ হয়ে যেতে পারে।
২।সিলিন্ডার সর্বদা সঠিক অবস্থানে রাখতে হবেঃ

এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাস সর্বদা খাড়াভাবে দাঁড় করিয়ে রাখতে হবে এবং সেটিকে কোন শক্ত কাঠামোর ওপর এই রাখতে হবে। সব সময় খেয়াল রাখতে হবে সিলিন্ডারে তলাতে যেন সমতল ভূমি পৃষ্ঠে রাখা হয় এবং সিলিন্ডারের গায়ের রেগুলেটর টি যেন সবসময় উপর দিকে। কখনোই বেশি প্রেসার পাওয়ার জন্য কিংবা তলানি গ্যাস ব্যবহার করার জন্য সিলিন্ডার কে উল্টো করে রাখবেন না। এই ভাবে সিলিন্ডার কে উল্টো করলে বড়সড় বিস্ফোরণ ঘটে যেতে পারে। রান্নাঘরে সিলিন্ডার কে সব সময় খোলামেলা জায়গায় রাখবেন। রান্নাঘর পরিষ্কার রাখার জন্য কখনোই সিলিন্ডার কে ঠেসে ঠেসে কোন দুর্গম স্থানে পাঠিয়ে দেবেন না। এমন যদি সিলেন্ডার কে রাখবেন যাতে আপনি সহজেই সিলিন্ডারের রেগুলেটর ধরতে পারেন এবং সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। যদি আপনার সিলিন্ডার সেরম অবস্থানে না থাকে তবে বুঝতে হবে আপনার সিলিন্ডার থেকে বড় বিপদ হতে পারে।
৩।গ্যাসের লিকেজ হলে কি করনীয়?

আপনার যদি কখনো মনে হয় গ্যাস লিক হচ্ছে কিংবা যদি আপনার ঘরে চারিদিকে গ্যাসের গন্ধ পান তবে কখনোই লাইটার বা দেশলাই জ্বালিয়ে এর পরীক্ষা করতে যাবেন না। এভাবে পরীক্ষা করতে গেলে ভয়ানক বিপদ ঘটে যেতে পারে। বাতাসে গ্যাসের গন্ধ পেলে সাতেসাতে বাড়ির দরজা জানালা খুলে দিন। আর তারপর সিলিন্ডারের রেগুলেটর অফ করে দিন। যদি একান্তই লিক হয়েছে কিনা পরীক্ষা করতে চান তবে সাবান এবং জল মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন এবং যেখানে আপনার মনে হচ্ছে লিক হয়েছে সেখানে ঢেলে দিন। ওই মিশ্রণে যদি বুদবুদ সৃষ্টি হয় তবে বুঝতে হবে লিক হয়েছে এর ফলে কোন ক্ষতি ছাড়াই লিক ধরা পড়ে যাবে। আর যদি কোথাও লীগ না হয়ে থাকে তাহলে ওই সাবান এবং জলের মিশ্রণ গড়িয়ে পড়ে যাবে। লিক ধরা পড়লে সাথে সাথে আপনি দক্ষ লোক কে খবর দিন এবং সিলিন্ডারটি এনে খোলা বাতাসে রাখুন।
৪।সিলিন্ডারের রক্ষণাবেক্ষণঃ

সিলিন্ডারটি যত্নসহকারে ভালভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করুন। প্রায়শই দেখা যায়, এলপিজি সিলিন্ডারের যন্ত্রাংশে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সমস্যা হয়, ত্রুটি হয়, যা আপনার গোচরীভূত হয় না। সাধারণত, এইসকল যন্ত্রাংশের ত্রুটির কারণেই বেশিরভাগ সময় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিতভাবে সিলিন্ডার ও যন্ত্রাংশের পরীক্ষণ করা উচিত। একজন এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহারকারী হিসাবে প্রথমেই দেখুন সিলিন্ডারে কোন অংশ দেবে গিয়ে টোল বা গর্ত মত আছে কিনা। যাকে ইংরেজীতে ডেন্ট বলে। সিলিন্ডারের গায়ে মরচে বা জং ধরেছে কিনা পরীক্ষা করুন। সিলিন্ডারের নির্দিষ্ট মেয়াদকাল রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করুন। মেয়াদ শেষ হয়ে আসলে, বদলে নিন। সাধারণত, মেয়াদকাল সিলিন্ডারের তলায় লেখা থাকে। প্রয়োজনে অনুমোদিত অভিজ্ঞ লোক দ্বারা সিলিন্ডার পরীক্ষা করিয়ে নিন। এছাড়া, সংযোগকারী পাইপটি দৃশ্যত ঠিক আছে কিনা পরীক্ষা করুন। ইঁদুরের কামড়ের দাগ দেখতে পেলে, অতিসত্ত্বর বদল করে নিন।
৫।সিলিন্ডার স্থানান্তর করার পদ্ধতিঃ

এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার স্থানান্তর করার সময় সর্বদা সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কখনোই এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার গড়িয়ে কিম্বা ছুড়ে স্থানান্তর করা উচিত নয়। এমনকি সিলিন্ডার কে উপর থেকে নিচে নিক্ষেপ করাও উচিত নয়। উপরোক্ত এই কাজগুলি করলে বড়সড় বিস্ফোরণ ঘটে যেতে পারে। সিলিন্ডার খালি হয়ে গেলেও তা ছুঁড়ে ফেলে কিংবা গরিয়ে স্থানান্তর করা উচিত নয়। এর ফলে সিলিন্ডারের গায়ে গর্ত সৃষ্টি হতে পারে যা ভবিষ্যতের জন্য সিলিন্ডার বিস্ফোরণ প্রবণ করে দেয়। সব সময় সেলেন্ডার কে হাতে করে তুলে নিয়ে আরেক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করতে হবে। সব সময় খেয়াল রাখতে হবে সিলিন্ডারের রেগুলেটর ও ভালভ যেন উপরের দিকে থাকে।
৬। কিছুদিনের জন্য সিলিন্ডার না ব্যবহার করলে কি করণীয়ঃ

আপনি বাড়ীর বাইরে বেড়াতে যাচ্ছেন এবং বেশি কিছু বাসায় রান্না হবে না; মানে আপনি বেশি কিছুদিন এলপিজি ব্যবহার করবেন না। তখন নিশ্চিত করুন যে সিলিন্ডারের ভাল্ব বা রেগুলেটর সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা হয়েছে। শুধু স্টোভ বা চুলার নব ঘুরিয়ে বন্ধ করা যথেষ্ট নয়, ভাল্ব বন্ধ করুন। এই সু অভ্যাসটি গড়ে তুলুন আর অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা থেকে নিজেকে এবং পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ রাখুন।
আরও পড়ুনঃভাগ্য পরিবর্তন করতে রান্নাঘর বানান বাস্তুসম্মত! জেনে নিন কিছু টিপস