বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে এবং সাথে সাথে বাড়ছে মানুষের রোগ সংক্রান্ত সমস্যা গুলো। যারা একটু সচেতনতার সাথে চলাচল করছে তারাই রোগ গুলোকে প্রতিরোধ করতে পারছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৫ কোটি মানুষ এখন থাইরয়েডজনিত রোগটিতে আক্রান্ত। কিন্তু সমস্যা হলো এর মধ্যে প্রায় ৩ কোটি এর মত মানুষ জানেই না তারা এই রোগে আক্রান্ত আছেন। গত শনিবার ঢাকার বারডেম হাসপাতালের মিলানায়তনে থাইরয়েড দিবস উপলক্ষে একটি সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করা হয় তখন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এসব কথা বলেন।
উক্ত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বারডেম হাসপাতালের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. জাফর এ লতিফ। আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মো. হাফিজুর রহমান, সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. এসএম আশরাফুজ্জামান, সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. এমএ হাসানাত, সহ-সভাপতি ডা. এমএ সামাদ, নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. ফরিদুদ্দিন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সম্পাদক ডা. কাজী আলী হাসান, বিজ্ঞান ও গবেষণা সম্পাদক ডা. নাজমুল কবীর কুরায়েশী, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাহজাদা সেলিম প্রমুখ।
তারা বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশের মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি অতিরিক্ত পরিমানে বেড়ে গেছে এবং এটি মানুষের শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর। থাইরয়েড রোগ বর্তমানে বিশ্বের ১ নম্বর রোগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশে এই থাইরয়েড হরমোনজনিত রোগীর সংখ্যা ৫ কোটি। যার মধ্যে প্রায় ৩ কোটি এর মত মানুষ জানেই না তারা এই রোগে আক্রাত্ন আছেন যার ফলে এই রোগ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই রোগ প্রতিরোধের জন্য মানুষের সচেতনতাই মুখ্য।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন , থাইরয়েড হরমোন কম বা বেশি নিঃসৃত হওয়ার কারনেই এই রোগের সৃষ্টি হয়। যার জন্য নারীদের বিয়ের আগেই অথবা গর্ভধারনের আগে থাইরয়েড পরীক্ষা করিয়ে নেয়া উচিত। যদি এই রোগের আশঙ্কা থেকে থাকে তাহলে চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ করা উচিত। আশঙ্কামুক্ত হওয়ার পরে গর্ভধারন করা উচিত। তা না হলে শিশুরা এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, এই রোগের নির্দিষ্ট কোন লক্ষন না থাকায় এই রোগ দিন দিন বেড়ে চলেছে এবং এই পরিস্তিতির সৃষ্টি হচ্ছে। এই হরমনের তারতম্যে কারনে শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি, মাসিকের সমস্যা, তকের সমস্যা, শরীর হঠাৎ করে মোটা ও চিকন হয়ে যাওয়া, হার্টের সমস্যা এমনকি ক্যান্সার ও হতে পারে। একজন পুরুষের বিপরীতে ১০ জন নারীর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশকে আয়রন ঘাটতির দেশ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং তারা বলেন এই আয়রন ঘাটতির কারনেই থাইরয়েডের মত মারাত্মক রোগ দিন দিন দেখা দিচ্ছে আর বেড়ে চলেছে। দুর্ভাগ্যবসত মানুষ এই সম্পর্কে কিছু জানেই না।
থাইরয়েড সমস্যার সব ধরনকে একসাথে হিসাব করে চিকিৎসকরা বলেন, এই রোগের বাংলাদেশে বর্তমান পরিস্থিতি মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি। প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের মধ্যে ২ এবং পুরুষদের মধ্যে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ থাইরয়েড় ও হরমোন বৃদ্ধিজনিত রোগে আক্রান্ত। যাদের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে তাদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও নারীর মধ্যে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ হারে থাইরয়েড ও হরমোনের ঘাটতিজনিত সমস্যা থাকতে পারে। ৭ ভাগের মত নারী ও পুরুষ সাবক্লিনিক্যাল হাইপোথাইরয়েডিজম রোগে ভোগে। নবজাতক শিশুরাও থাইরয়েডের হরমোন ঘাটতিজনিত সমস্যাতে ভুগতে পারে। খুলান বিভাগের এক জরিপের মাধ্যমে জানা যায় ৯২৫ জন নারীর মধ্যে ২০ দশমিক ৪৩ ভাগই থাইরয়েড সমস্যায় আক্রান্ত। গলার সামনের দিকে অবস্থিত প্রজাপতিসদৃশ গ্রন্থিটি হচ্ছে থাইরয়েড গ্রন্থি। এটি ট্রাকিয়া অথবা শ্বাসনালিকে পেঁচিয়ে থাকে। যদিও এই গ্রন্থিটি ছোট, কিন্তু এর কার্যকারিতা অনেক। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন মানব পরিপাকের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে থাকে।